High Court Verdict : ভারতের কেরালা হাইকোর্টের এক যুগান্তকারী রায়ে দেশজুড়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আদালত জানিয়েছে— একজন প্রাপ্তবয়স্ক খ্রিস্টান অবিবাহিত মেয়ে তার বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ দাবি করতে পারবেন না, যদি না তিনি শারীরিক বা মানসিকভাবে অক্ষম হন।
এই রায়টি শুধু পারিবারিক আইনের প্রশ্ন নয়, বরং ভারতের ধর্মীয় আইনের বৈষম্য নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু করেছে।
⚖️ রায়ের পটভূমি :
এই মামলায় একজন খ্রিস্টান ব্যক্তি পারিবারিক আদালতের এক আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন। ওই আদেশে তাঁকে স্ত্রী ও অবিবাহিত মেয়েকে মাসিক ভরণপোষণ দিতে বলা হয়েছিল — স্ত্রীকে ₹২০,০০০ ও মেয়েকে ₹১০,০০০।
আবেদনকারীর দাবি ছিল, তাঁর মেয়ে ২৭ বছর বয়সী এবং সম্পূর্ণ প্রাপ্তবয়স্ক, তাই আইন অনুযায়ী সে ভরণপোষণ দাবি করতে পারে না।
বিচারপতি কাউসার এডাপ্পাগথ আদালতে বলেন, “ফৌজদারি দণ্ডবিধির ১২৫ ধারা অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানরা শুধুমাত্র তখনই ভরণপোষণের দাবি করতে পারে, যখন তারা শারীরিক বা মানসিকভাবে নিজে উপার্জন করতে অক্ষম।”
📜 হিন্দু ও মুসলিম আইনে ভিন্নতা:
হিন্দু দত্তক ও ভরণপোষণ আইন, ১৯৫৬ অনুযায়ী, অবিবাহিত মেয়ে বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ পেতে পারে যতদিন না সে বিবাহিত হচ্ছে বা উপার্জনক্ষম হচ্ছে।
মুসলিম ব্যক্তিগত আইনেও একই বিধান রয়েছে — মেয়ের বিবাহ বা আর্থিক স্বনির্ভরতা পর্যন্ত বাবা দায়বদ্ধ থাকবেন।
কিন্তু খ্রিস্টান ব্যক্তিগত আইনে এমন কোনো বিধান নেই। তাই আদালত এই মামলায় ফৌজদারি আইন অনুসারে সিদ্ধান্ত নেয়।
🧩 সমাজে প্রতিক্রিয়া:
এই রায়ের পরে সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
- কেউ কেউ বলছেন, এটি আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে সঠিক সিদ্ধান্ত, কারণ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজের জীবিকার দায় নিজেকেই নিতে হবে।
- অন্যদিকে অনেকেই বলছেন, একই দেশে ধর্মভেদে আলাদা অধিকার থাকা সংবিধানের সমতার নীতি লঙ্ঘন করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় দেখাচ্ছে ভারতীয় আইনে ধর্মীয় বৈষম্য কতটা গভীরভাবে প্রভাব ফেলে।
👩⚖️ নারী অধিকার ও ইউনিফর্ম সিভিল কোড :
নারী অধিকারকর্মীরা বলছেন, বর্তমান যুগে ধর্মের ভিত্তিতে ভরণপোষণের অধিকার আলাদা হওয়া অযৌক্তিক।
যদি একজন হিন্দু বা মুসলিম মেয়ে বাবার কাছ থেকে ভরণপোষণ পেতে পারে, তবে একজন খ্রিস্টান মেয়েও সেই অধিকার পাওয়া উচিত।
এই বিতর্ক আবার সামনে এনেছে “ইউনিফর্ম সিভিল কোড” বা অভিন্ন দেওয়ানি বিধির প্রশ্ন— যা সকল নাগরিকের জন্য একই আইন প্রয়োগের কথা বলে।
