সমাজের লোভনীয় দৃষ্টি থেকে বাঁচতে নিজেকে পুরুষ বানিয়ে তুলেছেন তিনি!কীভাবে শুরু হয়েছিল তার এই জীবনযাত্রা?কাহিনীটা চোখে জল আনবে আপনার……
অনেক পতিতার কাছেই এই শিল্প থেকে পালানো সম্ভব নয়। কিন্তু, অসম্ভব বলে কিছুই হয় না! তাই তো সেই অন্ধকার জগতের বাঁধন ছেড়ে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন ফতেমা নামের এক মহিলা। না, তিনি স্বেচ্ছায় এই পেশায় আসেননি। বরং, তাকে এক প্রকার জোর করে এই পেশাদারিত্ব আপন করে নিতে হয়েছিল। আর শুনলে অবাক হবেন, এই পেশায় তাকে আসতে বাধ্য করেছিলেন তার শ্বাশুড়ি মা। হ্যাঁ, বিষয়টা শুনতে অবাক লাগলেও, এটাই সত্যি! আজ আপনাদের সেই ফতেমা-র গল্প শোনাবো।

মাত্র ৫ বছর বয়সে মা-বাবাকে হারিয়ে ফেলেছিল ছোট্ট ফতেমা। এরপর তার বড়ো হয়ে ওঠা অনাথ আশ্রমে। না, এত বড়ো কষ্ট দিয়েও জীবন তাকে কষ্ট পাওয়া থেকে মুক্তি দেয়নি। বরং, আরও বেশি কষ্ট কিভাবে তাকে দেওয়া যায়, সেই প্ল্যান-ই করে রেখেছিল। সময়ের সাথে সাথে ফতেমা বড়ো হতে থাকে অবহেলা, অযত্নে। একটা সময় সেই অনাথ আশ্রমের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে, সেখান থেকে সে পালিয়ে যায়। কিন্তু ভাগ্যের হাত থেকে তো আর পালিয়ে বাঁচা যায় না! তাই ভাগ্যের ফেরে মাজারের এক ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয়ে যায় তার।
বিয়ের পর আর পাঁচটা মেয়ের মতোই সুখের স্বপ্ন দেখেছিল ফতেমা। চোখ ভরা ছিল এক সাজানো সংসারের স্বপ্ন। কিন্তু কে জানতো, তার এই বিয়ে তার জীবনটা নরক বানিয়ে তুলবে? ফতেমা তখন অন্ত্বঃসত্বা, আচমকা একদিন তার শ্বাশুড়ি তাকে প্রতারণা করে বেচে দেয় পতিতালয়ে। এরপর সেখানে আর সকল পতিতার মতোই তার ওপর-ও চলে টাকা রোজগারের চেষ্টা। এভাবেই টানা ৭ দিন তাকে সেখানে একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়। কিন্তু ওই যে কথায় বলে না, যার কেউ থাকে না, তার ভগবান থাকে! আর সেই ঈশ্বরের সাহায্যেই একদিন অলৌকিকভাবে দরজা খোলা পেয়ে পালিয়ে যায় ফতেমা।

হ্যাঁ, এবার সে পায় একটা মুক্ত আকাশ, যেখানে প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নিতে পারবে সে। যদিও তথাকথিত সমাজ আজও মেয়েদের এতটা ছুট দেয়নি, তাই তো ফতেমাও সেই সাহস জুগিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে একা মেয়ে হয়ে মনুষ্য সমাজে তার বেঁচে থাকা বেশ কঠিন হয়ে উঠেছিল। অবশেষে ছেলেদের মত করে ছোট ছোট চুল কেটে, পুরুষ জাতির মতো পোশাক পরে নারী শরীরকে পুরুষ রূপ দিয়েছে সে। অবশ্য তার এই রূপধারণটা কিন্তু সমাজের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচার তাগিদে। আজকে সমাজ তাকে একজন পুরুষ রিক্সাওয়ালা বলেই চেনে। সকল মানুষের কাছে তার পরিচিতিও একজন পুরুষ হিসেবেই। কিন্তু দিনশেষে আর সব সাধারণ মেয়েদের মতো সেও একজন নারী। যে শুধু একটু সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে চায়, ভালোভাবে জীবন কাটাতে চায়। কিন্তু আজকের দিনে সেটাই তার কাছে বিরাট চাওয়া!



